মুনাফিকের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য
Table of Contents
মুনাফিক কাকে বলে
মুনাফিক এমন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে যার মধ্যে 'নিফাক' বিদ্যমান থাকে। নিফাক অর্থ হচ্ছে: কপটতা, ভণ্ডামি, ধোঁকাবাজি ও দ্বিমুখীভাব অন্তরের মধ্যে পােষণ করে রাখা। অন্তরে মধ্যে শত্রুতা ও বিরােধিতা গােপন রেখে বাইরে দিয়ে আনুগত্য প্রদর্শন করাকে নিফাক বলা হয়। পরিভাষায় বলা হয়-অন্তরে কুফর,শিরক ও অবাধ্যতা গােপন রেখে মুখে মুমিনসুলভ বাক্য উচ্চারণ করা এবং লােক দত সম্পন্ন করার নাম নিফাক। আর যে ব্যাক্তি এমন আচরণ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক।
মুনাফিক এর প্রকারভেদ
নিফাক বা মোনাফেকী হচ্ছে দুই প্রকার: প্রথম নিফাক হচ্ছে বিশ্বাসগত নিফাক এবং দ্বিতীয়ত নিফাক হচ্ছে কর্মগত নিফাক।বিশ্বাসগত নিফাক : বিশ্বাসগত নিফাক বড় কুফর যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। বিশ্বাসগত নিফাক হচ্ছে ছয় প্রকার: আল্লাহর নবী ও রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মিথ্যা সাব্যস্ত করা, অথবা রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে দ্বীন নিয়ে আসছেন তার কোনো কিছুকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করা, কিংবা রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ঘৃণা করা, অথবা রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যে দ্বীন নিয়ে এসেছে তাকে ঘৃণা করা, রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দ্বীনের ক্ষতিতে খুশি হওয়া অথবা রাসূলের দ্বীনের বিজয় অপছন্দ করা।
কর্মগত নিফাক : কর্মগত নিফাক হল ছোট কুফর যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে না। তবে তা বড় ধরনের অপরাধ ও মহাপাপ। তন্মধ্যে রয়েছে সে আমল যা নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার হাদীসে উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেন: সে হবে খাঁটি মুনাফিক যার মধ্যে এই ৪ টি স্বভাব বিদ্যমান থাকবে। এর কোনো একটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায় তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত। আর সেইগুলো হল:
১. তার নিকট আমানত রাখলে সে আমনতের খিয়ানত করে।
২. সে যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে।
৩. কথা দিয়ে তা রাখে না অর্থাৎ ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।
৪. ঝগড়া করার সময় অশ্লীল গালি দেয়।
২. সে যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে।
৩. কথা দিয়ে তা রাখে না অর্থাৎ ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।
৪. ঝগড়া করার সময় অশ্লীল গালি দেয়।
মুনাফিকের লক্ষণ বা আলামত কয়টি
সূরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা মুনাফিকদের কয়েকটি পরিচয় তুলে ধরেছেন। নিচে সেগুলো উল্লেখ করা হল।১. মুনাফিকরা মুখে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান পােষণের দাবি করে। কিন্তু তাদের অন্তরে যেমন এ ব্যাপারে কোনাে আস্থা নেই তেমনি তাদের কাজেও এ দাবির কোনাে প্রতিফলন পাওয়া যায় না।
২. মানুষকে প্রতারিত করার প্রবণতা তাদের প্রবল। এমনকি তারা মৌখিক দাবিতে ইমানের ঘােষণা দিয়ে এমন ধারণা পােষণ করে যে, তারা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে।
৩. তারা মনের ভেতর লালন করে শিরক, কুফরি ও প্রতারণার ব্যাধি।
৪. তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। অব্যাহত মিথ্যা ও শিরক কুফর ও প্রতারণার অকল্পনীয় মূর্খতার জন্য তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৫. মুনাফিকরা বিশৃঙ্খলা ও বিপর্য় সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে, কিন্তু তারা তা স্বীকার করে না।
৬. নিষ্ঠার সাথে ইমান আনাকে তারা নির্বোধদের কাজ মনে করে।
৭. তারা দ্বিমুখী নীতিকেই জীবনে সাফল্য লাভের মূলনীতি মনে করে।
৮. মুনাফিকদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলাে তারা মুমিনদের কাছে এলে মুমিনদের সঙ্গে থাকার কথা বলে, কাফিরদের কাছে গেলে কাফিরদের পক্ষ নেয়।
৯. মুনাফিকরা মুখে ইসলামের দরদি সেজে গােপনে ইসলামের মারাত্মক ক্ষতি করতে চেষ্টারত থাকে।
১০. মুনাফিকরা হচ্ছে সর্বহারা দল। অবিশ্বাস ও সন্দেহের আবর্তে পড়ে কাফির বা মুসলিম কোনাে এক দিকে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে পারে না।
১১. কাফিরদের চেয়েও মুনাফিকরা ইসলামের জন্য বেশি বিপজ্জনক।
মুনাফিক সম্পর্কে হাদিস
নবিজীর সাহাবি হজরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,নিফাক বা মুনাফিক রাসুল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যুগে ছিল,বর্তমান সময়ে আছে, আর সেটা হলাে ইমানের পরে কুফরি করা অর্থাৎ ইমান প্রকাশ করে আল্লাহর দীনের বিরােধী কাজ করা (বুখারি)
মুনাফিকের পরিণতি বা শাস্তি
মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়া’লা বলেন-নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে (সুরা আন-নিসা: ১৪৫)।