রাজকন্যা ও এক হাজার দিনার

Table of Contents
হাসির গল্প, মজার গল্প, শিক্ষনীয় গল্প, গল্প ছোটদের, বাংলা গল্প, প্রেমের গল্প, গল্প রোমান্টিক, গল্প লেখা

নীল ভূমধ্যসাগর তীরে অবস্থিত তারাবেলাস নগরী। পরাক্রমশালী রাজা জার্জিসের প্রধান নগরী। রাজা জার্জিস এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হলেন। মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি আবদুল্লাহ ইবনে সাদ (রা)। তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীও অগ্রসর হচ্ছে। রাজা মুসলিম বাহিনীর অগ্রযাত্রা রোধ করে দাঁড়ালেন। রাজাই আজ সেনাপতির ভার নিয়েছেন। তার সুন্দরী রাজকন্যাও এই অভিযানে অংশ নিলো।
 
রাজা জার্জিসের দুর্ধর্ষ বাহিনী মুসলিম বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পণ করল। কিন্তু তাদের সেই আশা পূর্ণ হলো না। মুসলিম বাহিনীর পাল্টা আঘাতে জার্জিস বাহিনী তছনছ হয়ে গেল। তিনি আর পেরে উঠলেন না। তাই রাজা এক নতুন কৌশল গ্রহণ করলেন। তিনি সেনাদের উজ্জীবিত করার জন্য এক ঘোষণা দিলেন, 'যে বীরপুরুষ মুসলিম সেনাপতি সাদ (রা)-এর শির এনে দিতে পারবে, আমার কন্যাকে তার সাথে বিয়ে দেবো।' 

রাজা জার্জিসের এই ঘোষণা কাজে লাগল। এতে তার সেনাদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হলো। জার্জিসের সেনারা পুরস্কার পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সেনাদের আক্রমণে এবার মুসলিম সেনাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে পড়ল। মুসলিম সেনারা তাদের মনোবল হারিয়ে ফেলল। এ সময় সাহাবি হজরত যুবাইর (রা) এগিয়ে গেলেন। তিনি সেনাপতি সাদকে (রা) এক উত্তম পরামর্শ দিলেন। যুবাইর (রা) বললেন, 'আপনিও ঘোষণা করুন, যে তারাবেলাসের রাজার ছিন্নমুণ্ড এনে দিতে পারবে, তাকে সুন্দরী জার্জিস দুহিতাকে উপহার দেবো এবং সাথে এক হাজার দিনার বখশিশ দেবো।'

হজরত যুবাইরের (রা) প্রস্তাব সাদ (রা) গ্রহণ করলেন। তিনি উপহারের কথা ঘোষণা করে দিলেন। সাথে সাথে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে গেল। ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হলো তারাবেলাসে। মুসলিম সেনারা নতুন উদ্যমে রাজার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এতে রাজার চরম পরাজয় ঘটল। রাজা জার্জিস নিহত হলেন। তার কন্যাকে বন্দি করা হলো। সমাপ্ত হলো ভয়ংকর যুদ্ধ। 

এবার রাজাকে হত্যার পুরস্কার দেওয়ার পালা। মুসলিম শিবিরে সকল সেনাকে ডাকা হলো। সভায় বন্দি জার্জিস দুহিতাকেও আনা হলো। সেনাপতি সাদ (রা) জিজ্ঞেস করলেন, 'আপনাদের মধ্যে যে জার্জিসকে হত্যা করেছেন, তিনি এগিয়ে আসুন। আমি প্রতিশ্রুত উপহার তাঁর হাতে তুলে দিচ্ছি।' 

মজার ব্যাপার হলো সেনাপতির ডাকে কেউ এগিয়ে এলো না। মুসলিম সেনাপতি বারবার আহবান জানালেন। কেউ সাড়া দিচ্ছে না। তাই সভাজুড়ে নেমে এলো পিনপতন নীরবতা। সবাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করছেন। এদিকে জার্জিস দুহিতা তো হতবাক। তিনি পিতার হত্যাকারীকে তার সামনেই দেখতে


পাচ্ছেন। কিন্তু তিনি দাবি নিয়ে আসছেন না কেনো? তিনি কেনো রাজকন্যা, অর্থ-এসবকে উপেক্ষা করছেন? দুনিয়ার কেউ এত বড় উপহার উপেক্ষা করতে পারে এমন ইতিহাস তার জানা নেই। এই অবস্থা দেখে রাজকন্যার মন থেকে পিতার হত্যাকারীর প্রতি যে ঘৃণা ছিল তা আর অবশিষ্ট রইল না।

অবশেষে সেনাপতির আদেশে জার্জিস দুহিতা হজরত যুবাইর (রা)-কে দেখিয়ে দিলেন। তিনি বললেন, 'ইনিই আমার পিতার হত্যাকারী। তিনিই সেই বীর পুরুষ।' 

সেনাপতি সাদ (রা) তো হতবাক। তিনি হজরত যুবাইর (রা)-কে কাছে ডাকলেন। তাঁর ঘোষিত উপহার তাঁকে গ্রহণ করতে বললেন। 

কিন্তু যুবাইর (রা) নিরুত্তাপ। তিনি শান্ত ও অবিচল। এরপর যুবাইর (রা) অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেন, 'মহামান্য সেনাপতি। আমি জাগতিক কোনো লোভের আশায় যুদ্ধ করিনি। যদি কোনো পুরস্কার আমার প্রাপ্য হয় তা হলো জান্নাত। সেই পুরস্কারের জন্য আমার আল্লাহই যথেষ্ট।'